ভৈরবের উজানভাটি রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে আবার ছুটলাম। পাশে বসা স্ত্রীর সঙ্গে নানা আলাপসালাপ করতে করতে কখন যে সিলেট শহরে পৌঁছে গেছি, টেরও পাইনি। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক, সিলেটে যখন চলে এসেছি, তখন সুনামগঞ্জের দেরি নেই। রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে চা-দোকানিকে সুনামগঞ্জের রাস্তা কোন দিকে জিজ্ঞেস করার পর সিলেটি ভাষায় তিনি যা বললেন, তার মানে বুঝে বোকা বনে গেলাম। আমরা সুনামগঞ্জে যাওয়ার রাস্তা ১০ কিলোমিটার আগেই ফেলে এসেছি। হায়রে কপাল! গাড়ি ঘুরিয়ে সুনামগঞ্জের দিকে চালাতে লাগলাম।
সুনামগঞ্জ শহরে যখন পৌঁছালাম, তখন বিকেল হয়ে গেছে। নিরিবিলি শহরটা। প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গেল। হোটেলের বারান্দায় বসে এক কাপ চা সারা দিনের ক্লান্তি দূর করে দিল। হোটেলের পাশে গাছগাছালিঘেরা পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে কয়েকটি হাঁস গা থেকে পানি ঝরাচ্ছে। এবার বাড়ি ফেরার পালা তাদের।
সন্ধ্যার পর চলে গেলাম মরমি কবি হাসন রাজার স্মৃতি জাদুঘরে। পুরোনো বাড়িটির প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে আছে তাঁর ছবি আর ব্যবহৃত জিনিসপত্র। পানি খাওয়ার গ্লাস থেকে শুরু করে ঘোড়ার লাগাম, সবই আছে। তাঁর নাতি সমীরণ দেওয়ান খুবই আগ্রহ নিয়ে প্রতিটি জিনিসের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। আমি কাঠখোট্টা মানুষ, শিল্প-সাহিত্য বুঝি কম। তারপরও কবি হাসন রাজার বিশাল এক ছবির ওপরে লেখা দুটো লাইনে আমার চোখ আটকে গেল, ‘রূপ দেখিলাম রে নয়নে আপনার রূপ দেখিলাম রে, আমার মাঝত বাহির হইয়া, দেখা দিল আমারে।’
স্ত্রী পাশে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘কিছু বুঝলা?’। আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি...।
বাকি সময়টা কেটে গেল হাসন রাজার গান শুনে। এবার হোটেলে ফেরার পালা। একজনের বুদ্ধিতে চলে গেলাম পেছনের পুরোনো একটা বাড়ির কাছে। হাসন রাজার বাড়ি। যেখানে তিনি থাকতেন। বাড়ির পাশের ভাঙা পুকুর ঘাটে দাঁড়াতেই কোত্থেকে যেন হিম বাতাস এসে পুরো কলজে নাড়িয়ে চলে গেল। একে তো পুরোনো বাড়ি, তার সঙ্গে ভাঙা পুকুর ঘাট, আর সেই সঙ্গে নিকষ অন্ধকার। ভয়ে শক্ত হয়ে দাঁত কপাটি লাগায় এর চেয়ে বেশি আর কী লাগে।
পরদিন সকালে শহর থেকে বের হতে গিয়েই আটকে গেলাম। তাহিরপুর যাওয়ার রাস্তায় গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে না। কাচুমাচু মুখ করে অনুরোধ করায় বিশেষ বিবেচনায় আমাদের গাড়ি ছাড়া পেল। স্থানীয় এক লোক এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেন। তিনি অনুরোধ করলেন তাঁকে যেন মাঝপথে তাঁর বাসায় নামিয়ে দিই। সানন্দে রাজি হয়ে গেলাম।
চারপাশটা বিস্তীর্ণ সবুজ ধানে ভরা। হাওর অঞ্চল, তাই বর্ষার আগে এটাই শেষ ফসল। তারপর পানিতে তলিয়ে যাবে সবকিছু। তখনো কোথাও কোথাও জলাভূমি দেখা যাচ্ছে। গাড়ির কাচ নামিয়ে বুকভরে নিশ্বাস নিই। আহা! কী সুন্দর এই দেশটা।
গত মার্চ মাসে বেড়াতে গিয়েছিলাম সুনামগঞ্জের এই জায়াগায়। হাওর তখন ভরে ওঠেনি। কিন্তু সে সময়েও দারুণ সুন্দর প্রকৃতি। রাস্তার দুই পাশে বেশ কিছু দোকান নিয়েই ছোট এক বাজার। হোটেলের সামনে মাটির চুলার ওপর বড়সড় তাওয়াটা যেন আমাদের অপেক্ষাতেই ছিল। আহা! বেচারা, তেল না পেয়ে কেমন শুকিয়ে গেছে। নাশতার অর্ডার দিতেই ব্যস্ত হয়ে গেলেন বাবুর্চি। তাওয়ায় তেল ছড়িয়ে দিয়েই চটপট চার-পাঁচটা পরোটা ছেড়ে দিলেন। তারপর এপাশ-ওপাশ করে, খুন্তির চাপে চাপে গায়ে তেল মেখে কেমন মুচমুচে হয়ে উঠল পরোটাগুলো। তারপর তাওয়ায় পেঁয়াজ-কাঁচা মরিচ মেশানো ডিমটা যখন ছাড়লেন, তার ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ল যেন বাজারজুড়ে। বেঞ্চে বসে নাশতা খেতে খেতেই হাওয়া ছেড়ে দিল। হাওয়ার জোর বাড়ছে। ঝড়ের তোড়ে বাজারের দোকানগুলো দ্রুত ঝাঁপ ফেলে দিল। আমরাও দৌড়ে আশ্রয় নিলাম গাড়ির ভেতর।
ধীরে ধীরে ঝোড়ো হাওয়া থেমে গেল। কেমন এক অদ্ভুত নীরবতা চারপাশে।
এবার একটা দ্বিধায় পড়ে গেলাম। সামনের দিকে যাব নাকি সুনামগঞ্জ শহরে ফিরে যাব। একজন সাইকেল আরোহী এসে জানাল সামনে অনেক বাঁশ ভেঙে রাস্তায় পড়ে আছে। ভেবে দেখলাম, এভাবে তো ফিরেও যাওয়া যাবে না। পেছনের রাস্তাতেও নিশ্চয় গাছ পড়ে আছে যা থাকে কপালে, সামনে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। চলতে চলতে পৌঁছে গেলাম তাহিরপুর। গন্তব্য টাঙ্গুয়ার হাওর। কিন্তু এখান থেকে গাড়ি আর যাবে না। মোটরসাইকেলে চড়ে ঘাটে যেতে হবে। তাই সই...।
Source: Prothom-alo
herzamanindir.com - harrah's raffle tickets
ReplyDeleteharrah's raffle tickets harrah's raffle 출장샵 tickets 먹튀 harrah's raffle 프로토 tickets harrah's raffle tickets harrah's 바카라 사이트 raffle tickets harrah's raffle tickets harrah's raffle tickets 인터넷 바카라 사이트 harrah Rating: 3.9 · 22 votes