ছুটির দিনগুলোকে আরো উপভৌগ্য করতে চলুন ঘুড়ে আসি ঢাকার নিকটস্থ দর্শনীয় স্থান পানাম নগর, নারায়নঞ্জে।
পানাম নগর, নারায়ণগঞ্জ।
পানাম সোনারগাঁয়ের একটি প্রাচীন এলাকা। বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার অন্তর্গত এ এলাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মোগরাপাড়া ক্রসিং থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। তেরো শতকের শেষপাদে সোনারগাঁয়ে হিন্দু আমলের রাজধানী শহরটি এখানেই অবস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। পরবর্তী সময়ে পুরনো রাজধানী শহরের দক্ষিণে যে মুসলিম রাজধানী শহর গড়ে ওঠে, তারও অংশ ছিল এ পানাম এলাকা। সম্ভবত এখানে তখন মুসলিম শাসনকর্তাদের আবাসস্থল ছিল।
মুগলদের সোনারগাঁও অধিকারের (১৬১১) পর মহাসড়ক ও সেতু নির্মাণ করে রাজধানী শহরের সঙ্গে পানাম এলাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। পানামে এখনও মুগল আমলের তিনটি ইটনির্মিত সেতু রয়েছে। এগুলি হলো পানাম সেতু, দালালপুর পুল ও পানামনগর সেতু। এ সেতুগুলির অবস্থান এবং পানামের তিন দিকের খাল বেষ্টনী থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এলাকাটি মধ্যযুগীয় নগরের উপশহর ছিল। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে মোগরাপাড়া ক্রসিং থেকে পানাম অভিমুখী যে পাকা সড়কটি নীলকুঠি পর্যন্ত বিস্তৃত, সেটি মধ্যযুগীয় সোনারগাঁও এবং পানাম এলাকার একমাত্র পুরনো নিদর্শন বর্তমান পানামনগরের মধ্যে বিভাজন রেখা বলে মনে হয়। এ পাকা সড়কের পূর্ব পার্শ্বে এবং আমিনপুরের বিপরীত দিকে বর্তমান পানাম শহর অবস্থিত। এ সড়ক থেকে সরু খালের উপর নির্মিত এক খিলান বিশিষ্ট কুঁজো আকৃতির একটি সেতুপথ পানামনগরের প্রধান সড়কে গিয়ে মিলেছে।
ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এর ফলশ্রুতিতেই গড়ে উঠেছিল বর্তমান পানামনগর। উপনিবেশিক আমলে সোনারগাঁও সুতিবস্ত্রের প্রধানত ইংলিশ থান কাপড়ের ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং এরই সুবাদে গড়ে ওঠে নতুন শহর পানামনগর। উনিশ শতকে ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে উঠে আসা কিছুসংখ্যক হিন্দু তালুকদার স্থানটিকে আবাসস্থলরূপে বেছে নেন। পানামনগরের বর্তমান ইট নির্মিত ইমারতগুলি স্পষ্টতই ছিল হিন্দু ব্যবসায়ী-তালুকদারদের আবাসিক ভবন। ইমারতগুলি উনিশ শতকের প্রথম দিকে, এবং পরেরগুলি উনিশ শতকের শেষ ও বিশ শতকের প্রথম দিকে নির্মিত বলে ধরে নেওয়া যায়। উনিশ শতক থেকে গড়ে ওঠা পানামনগরের নির্মাণ অগ্রগতি ও শ্রীবৃদ্ধি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সমাপ্তিকাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
পানামনগর একটি একক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত শহর। গড়ে ৫ মিটার প্রশস্ত ও ৬০০ মিটার দীর্ঘ একটিমাত্র সড়কের দুপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে শহরটি। ইমারতগুলি সড়কের দুপাশে সারিবদ্ধভাবে নির্মিত এবং শহর এলাকার বাড়ির অনুরূপ বৈশিষ্ট্যে সবগুলি ইমারতের সদর বা সম্মুখভাগ রাস্তার দিকে। এ ইমারতসমূহ পানাম বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে রয়েছে ভগ্নপ্রায় ও অযত্নে লালিত ৫২টি বাড়ি; সড়কের উত্তর পাশে ৩১টি এবং দক্ষিণ পার্শ্বে ২১টি। পানামনগরের চতুষ্পার্শ্ব কৃত্রিম খাল বা পরিখা দ্বারা সুরক্ষিত। শহরের উত্তর ও দক্ষিণ পার্শ্ব ঘিরে দুটি সুপ্রশস্ত খাল সরাসরি বিস্তৃত।
পশ্চিম পার্শ্ব ঘিরে একটি সরু খাল এ দুটি খালকে যুক্ত করেছে। এ সরু খালের উপরই স্থাপিত পানামনগরে প্রবেশের সেতুটি। পানামনগরের দক্ষিণের খালটি ডানদিকে মোড় নিয়ে পানাম বাজারের মধ্য দিয়ে উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত রাস্তা অতিক্রম করে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে। নগরের উত্তর দিকের পঙ্খীরাজ খালটি পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা-মেনিখালীর স্রোতধারায় গিয়ে মিশেছে।
পানামনগরের ইমারতগুলি কোথাও পরস্পর বিচ্ছিন্ন, আবার কোথাও সন্নিহিত। এদের অধিকাংশই আয়তাকার এবং উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত; উচ্চতায় এক তলা থেকে তিন তলা। বাড়িগুলির পেছন দিকের পুকুর, ঘাট ও ইদারার অবস্থান থেকে বোঝা যায় যে, সন্নিহিত বাড়ির বাসিন্দারা যৌথভাবে বাড়ির পশ্চাৎ ভাগের সুবিধাদি ভোগ করতেন। ইমারতগুলির অবয়ব ও নমুনায় বেশ কিছু সাদৃশ্য রয়েছে, যেমন দুই বা তিন তলা পর্যন্ত উচ্চতা, গঠনের অনুরূপতা এবং খিলান দ্বারপথের সাদৃশ্য ইত্যাদি। অন্যদিকে বারান্দা, ঝুলবারান্দা বা অলিন্দ, উন্মুক্ত গ্যালারি ও দেউড়ি সংযোজনের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করা হয়েছে। ইমারতগুলির শীর্ষে অলঙ্কৃত ছাদ-পাঁচিল বা রেলিং ও অভিক্ষিপ্ত কার্নিস ইমারতের গঠন কাঠামোর সঙ্গে চমৎকারভাবে মানানসই হয়েছে। ইউরোপীয় স্থাপত্যের অনুকরণে রূপায়িত হয়েছে ইমারতগুলির অলঙ্করণ সজ্জা। কোথাও কোথাও স্থানীয় নকশা ব্যবহূত হয়েছে।
পানামের ইমারতগুলির সবই ইটনির্মিত। ইমারতের বহির্ভাগের গাঁথুনির উপযোগী করে ব্যবহূত হয়েছে বিভিন্ন আকৃতির ইট, যেমন- গোলাকার, খিলানকার, চোখা, অর্ধবৃত্তাকার, বক্ররেখ ইত্যাদি। ইমারতের দেয়ালগুলি ৫০ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার পুরু। ছাদ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাঠের কড়ি-বরগার উপর স্থাপিত। প্রায় সব ইমারতেই অঙ্গসজ্জার উপকরণ হিসেবে কাঠের দরজা জানালার অনুকরণে প্লাস্টারে তৈরি কৃত্রিম দরজা ও জানালা ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয়েছে ঢালাই লোহার তৈরি ব্রাকেট, ভেন্টিলেটর, জানালার গ্রিল, রেলিং-এর পিলপা। ইমারতের অভ্যন্তরভাগের কারুসজ্জায় প্রায় সর্বত্রই চীনামাটির বাসনের টুকরা (স্থানীয়ভাবে চিনিটিকরি নামে পরিচিত) ব্যবহূত হয়েছে। বহির্ভাগের অলঙ্করণে এর ব্যবহার কদাচিৎ দেখা যায়। খিলান ও ছাদের মধ্যবর্তী স্থানে ব্যাপকভাবে অলঙ্করণের প্রয়োগ দেখা যায়।
ইমারতের নকশা অনুযায়ী পানামের বসতবাড়িগুলিকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়: মধ্যবর্তী হলঘর সম্বলিত ধরন, মধ্যবর্তী অঙ্গন (উঠান) সম্বলিত ধরন ও সমন্বিত ধরন। মধ্যবর্তী হলঘর ইমারতের সংযোগকেন্দ্র বিধায় এগুলোকে ব্যাপক অলঙ্করণের সাহায্যে অতীব মনোরম করে তোলা হয়েছে। অঙ্গনের চারপাশ ঘিরে নির্মিত হয়েছে অন্যান্য কক্ষগুলি। অঙ্গনের ভিত পাকা এবং এর উপরিভাগ ছাদহীন, উন্মুক্ত। সাধারণভাবে অঙ্গনের চারপাশে রয়েছে বারান্দা এবং এ বারান্দায় রয়েছে খিলানাকার দ্বারপথ। সমন্বিত ধরনের বাড়িগুলির অভ্যন্তরে কোন অঙ্গন বা হলঘর নেই। পানামের অধিকাংশ বাড়ি বিশেষত একতলা বাড়িগুলি এ সমন্বিত ধরনের অন্তর্ভুক্ত।
পানাম বরাবরই ছিল হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর হিন্দুদের দেশত্যাগের ফলে পানাম অনেকটা জনমানবহীন শহরে পরিণত হয়।
*তথ্য সূত্র: বাংলাপিডিয়া
পানাম বরাবরই ছিল হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর হিন্দুদের দেশত্যাগের ফলে পানাম অনেকটা জনমানবহীন শহরে পরিণত হয়।
*তথ্য সূত্র: বাংলাপিডিয়া
Going to enjoy the holidays more, visit the nearest tourist spot in Dhaka, Panam Nagar, Narayanganj.
Panam City, Narayongonj.
Panam ancient Painam, a locality now in Sonargaon Upazila of Narayanganj district, about 2.5 kilometer to the north of Dhaka-Chittagong highway at Mograpara point. It is said to have been the site of Hindu capital city of Sonargaon emerging in the seventh decade of the thirteenth century. The Panam area formed part of the Muslim metropolis developed on the south of the old city, and perhaps constituted the place of residence of the early Muslim governors.'
After the Mughal conquest of Sonargaon (1611) the Panam area was connected with the ruling metropolis by the construction of highways and bridges. Panam still possesses three brick bridges belonging to the Mughal period: Panam Bridge, Dalalpur Bridge and Panamnagar Bridge. The existence of these bridges, and the canals enclosing the site on three sides is indicative of its being a suburban area of the medieval city.
In all probability, the present Panamnagar grew as a by-product of the commercial activities of the English East India Company and of the Permanent Settlement. The East India Company established their factory in Panam for the purchase of muslin and other cotton fabrics. The Company, for the purchase of muslin, used to distribute annually to the weavers from their factory in Panam as much as a lakh of rupees as dadni (dadni system advance), and it is estimated that there were then 1400 families of Hindu and Muslim weavers in and around Panam. Sonargaon developed into a center of trade in cotton fabrics, chiefly English piece goods, during the colonial period, and thereby grew the new township of Panamnagar. A group of Hindu talukdars, who came into being from among the traders in the nineteenth century, chose this site for their residence. The existing brick buildings of Panamnagar, obviously the residence of the Hindu merchant-talukdars, can be dated back to early nineteenth, and the later ones to the late nineteenth and early twentieth centuries. Panamnagar which developed in the nineteenth century continued to flourish till the end of the Second World War.
Panamnagar, a unique township, stretched in a single street 5 meter wide on the average and 600 meters in length. All the buildings have the character of urban street front houses and are lined up on either side of this street which ends up at the Panam bazar. Fifty-two houses exist in dilapidated and disused condition having 31 on the north side of the street and 21 on the south. Panamnagar appears to be well protected by artificial canals all around. Two fairly wide canals run parallel to the street on its either side and joined by a narrow canal on the western side over which is the entrance bridge (Panamnagar Bridge). On the eastern side, the canal on the south swerves rightward and goes eastward crossing the north-south road that passes through the Panam bazar. The northern canal, the Pankhiraj Khal, runs eastward to meet the Meghna-Menikhali stream.
The building layouts in Panamnagar are both detached and attached types, mostly rectangular in shape and elongated in the north-south direction. The height of the buildings varies from single to three stories. A shared use of backyard facilities among the adjoining houses can be observed from the layout of pond, ghat, well etc. The buildings follow a pattern language by which a unity has been achieved, like the use of two or three story height, symmetry, arched openings etc. On the other hand, varieties have been achieved in the pattern of the buildings by the introduction of veranda, balcony, loggia, and porch. The crowning of the buildings with decorative parapet and projecting cornice fascinatingly interlocks the structures with the sky in the backdrop. The decorative treatments of the buildings in Panam were transposed from European architecture and blended in places with local motifs.
Bricks used in the buildings of Panam have been modeled in different shape like rounded, angular, rectangular, arched, pointed, semi-circular, curvilinear etc according to the need of surface articulation. The thickness of brick masonry walls varies between 50 and 70 cm. Roof stands rafter and purlin made of wood in most cases. Blind doors and windows shaped with plaster are also applied as a common decorative element. Cast iron brackets, ventilators, window grills, balusters have been extensively used. The use of broken China, locally known as chin tiki, is almost common in interior decoration, while its stray application is visible on the exterior. Decoration elements have been extensively applied in the space between the arch and ceiling.
According to building layout design, the dwelling houses of Panam can be classified into three basic typologies: central hall type, central courtyard type, consolidated type, and the type without any inner court or hall. The central halls being the nerve center of the houses are highly romanticised with extensive decorations. The building activities and layout are arranged around the courtyards which are essentially enclosed, paved and open to the sky. In general, the courtyards are surrounded by veranda on all sides. Consolidated typology refers to those houses without any inner court or hall. Most of the houses, particularly the single-storeyed ones, belong to this typology.
*Information Source: Banglapedia
কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে নারায়নগঞ্জ এর দূরত্ব মাত্র ১৪ কি.মি. ঢাকার গুলিস্তান স্টেডিয়াম এর সামনে থেকে বোরাক এ সি বাস এ করে নারায়নঞ্জ এর মোগরাপাড়া পর্যন্ত যাবেন। ভাড়া ৫৫ টাকা। নন এ সি বাস এ ভাড়া ৩০/৩৫ টাক।
মোগরাপাড়া বাস স্ট্যান্ড এ নেমে অটোতে করে প্রথমে পানাম নগরে চলে যাবেন ( চাইলে সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘরে আগে যেতে পারেন )।
*পানাম নগর প্রবেশ মূল্য ১৫ টাকা। বিদেশিদের জন্য ১০০ টাকা।
How to go?
Narayanganj distance from Dhaka is only 14 km From the Gulistan Stadium in Dhaka, By Borak AC Bus go to Narayananj's Mograpara. Rent 55 tk. Rent and at non AC Bus 30/35.
After reach the Mograpara Bus Stand, you can go by auto to Panam City (if you want to go before the Sonargaon Folk Art Museum).
*Panam city entry fee is 15 taka, For foreigner 100 taka .
No comments:
Post a Comment