গাঢ় সবুজে সতেজতা - MASS TRAVEL

The Biggest Travel Group

Breaking

Home Top Ad

Post Top Ad

Monday, April 16, 2018

গাঢ় সবুজে সতেজতা


চা-বাগান। ওয়াও! বৃষ্টি ভেজা এমন গাঢ় আর সতেজ সবুজ দেখে এই শব্দটাই মুখে আসে। দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় কোথায়? শ্রীমঙ্গল। ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’র দেশ সিলেট অঞ্চলের বেশির ভাগ চা-বাগানই মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জজুড়ে। সিলেটেও আছে। তবে শ্রীমঙ্গলে ঘাঁটি গাড়লে চা-বাগানের অপূর্ব সৌন্দর্যের একেবারে ভেতরেই থাকা হবে। আর এর আসল সৌন্দর্য ধরা দেয় বৃষ্টির সময়টাতেই। বর্ষা আর শরৎ—এই দুই সময়ে গেলে এ এলাকাটা যে অবারিতভাবে মন আর হূদয়কে টেনে নেবে তা হলফ করেই বলা যায়। আর যদি থাকে ছবি তোলার শখ—তবে এক ট্রিপেই পাওয়া যাবে অনেক ভালো ছবি।
এ অঞ্চলটা যে কবার গিয়েছি প্রতিবারই প্রথম দর্শন করেছি মাধবপুর হ্রদ। শ্রীমঙ্গল থেকে ১০ কিলোমিটারের কিছু বেশি পথ। শ্রীমঙ্গল পেরিয়ে চা-বাগানের মধ্য দিয়ে রাস্তা। চারপাশে সবুজ। সকালের দিকে চোখে পড়ে চা তোলার দৃশ্য। টি রিসোর্টও এখানে। আগে থেকে যোগাযোগ করে গেলে এই টি রিসোর্টেও ঘাঁটি গাড়া যায়। শ্রীমঙ্গল থেকে এই রাস্তাটা লাউয়াছড়া বনের মধ্য দিয়ে চলে গেছে শমসেরনগর। লাউয়াছড়া বনের ঠিক আগে আগে ডান দিকে বাঁক নিলেই মাধবপুর হ্রদের রাস্তা। এটাও চা-বাগানের মধ্য দিয়ে। ইতিউতি কিছু টিলায় আনারসের বাগানও চোখে পড়বে। প্রথম যেবার মাধবপুর গেলাম, হ্রদের কিনারে পৌঁছাতেই ঝুম বৃষ্টি। পানির দিকে তাকালে স্বচ্ছ পানিতে বৃষ্টির টাপুরটুপুর। একটু ওপরে তাকলে লাল মাটি আর গাঢ় সবুজ। বৃষ্টি থেমে গেলেই হ্রদের পানির স্বচ্ছতা মুগ্ধ করে দেয়। আর শরতে ‘নীল আকাশে কে ভাসালো সাদা মেঘের ভেলা’র সবচেয়ে ভালো চিত্রায়নের কথাই মনে করিয়ে দেয়। আকাশে পেঁজা তুলোর মতো ভেসে বেড়ানো মেঘের প্রতিচ্ছবি যখন হ্রদের জলে পড়ে তখন হ্রদটাই হয়ে ওঠে আকাশ আর তাতে ভেসে বেড়ায় মেঘেরা। সারাবেলা ঘুরে সন্ধ্যার দিকে ফিরে আসা যায় শ্রীমঙ্গলে। আবার চাইলে লাউয়াছড়া বনেও ঢুঁ মারা যাবে। আবার সেই রাস্তা। বন এলকায় ঢুকলেই বৃক্ষের বিশালতা চমকে দেয়। লাউয়াছড়া বনে ঢোকার যে জায়গাটা সেখানেও দুপাশে সব বিশাল বৃক্ষ—প্রাকৃতিক ফটক যেন। বনে ঢুকে কিছুদূর গেলে বন বিভাগের অফিস। বন দেখতে টিকিটের বালাই নেই। আধা ঘণ্টা, এক-দুই-তিন-চার ঘণ্টার ট্রেইল আছে। ট্রেইলের পথ চেনাতে আছে ইকো গাইড। বনের মধ্যে কিছুদূর পরপর চোখে পড়বে ঝিরি। বর্ষাকালে ঝিরিঝিরি নালায় জোঁকও চোখে পড়ে। ওপরে মাঝেমধ্যেই দেখা মেলে বানরের। ভোরের দিকে গেলে উল্লুকের দেখাও মিলতে পারে। টিলা আছে এ বনে। সেখানে খাসিয়াপল্লি। সেখান থেকে নেমে আবার বনে কিছুটা ঘুরতে এক ঘণ্টার মতো সময় লাগে। লাউয়াছড়ার আরও গভীরে গেলে তিন-চার ঘণ্টার ট্রেইল বেছে নেওয়া ভালো হবে।
সকালে লাউয়াছড়া বন ঘুরে চাইলে সেখান থেকেই যাওয়া যায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। ৯০ কিলোমিটার দূরত্ব পেরোতে হবে। বন, চা-বাগান, সমতলভূমি পেরিয়ে বড়লেখা উপজেলায় পড়েছে মাধবকুণ্ড। ওই এক কথা—বর্ষাকালে এই জলপ্রপাতের শুভ্র পানির খেলা অনেক বেশি সুন্দর। পানির ধারাও বেশ প্রশস্ত। মাধবকুণ্ডের পাশেই আছে পরীকুণ্ড। টিলা ধরে একটু ওঠানামা—তাতেই পাশাপাশি দুই জলপ্রপাত।
শ্রীমঙ্গলকে কেন্দ্র করে সতেজ সবুজে অবগাহন করার আনন্দটা বর্ষাতেই সবচেয়ে বেশি।
পল্লব মোহাইমেন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

No comments:

Post a Comment

Sponsorship