মুন থাংয়ের ডাকে ধড়মড় করে উঠে দেখি ভোর পাঁচটা। এত তাড়াতাড়ি রাতটা পার হয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি। পাহাড়িদের কাঠের ঘরে এত আয়েশ করে ঘুমালাম যে আগের দিনের পাঁচ ঘণ্টা হাঁটার ধকল রাতের মধ্যেই শেষ। বেথেল পাড়া থেকে আরথাহ পাড়া। আঁকাবাঁকা পথ ধরে কয়েকটি পাহাড় ডিঙিয়ে যখন পৌঁছাই প্রায় আড়াই হাজার ফুট ওপরের আরথাহ পাড়ায়, তখন চলছে সন্ধ্যার আয়োজন। রাতে লালচন সাং বমের বাড়িতে থাকার বন্দোবস্ত করে রেখেছিলেন আমাদের গাইড মুন থাং। জায়গাটা বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায়।
হাঁটাপথ ধরেই শুরু হলো আমাদের তিনাপের মূল অভিযান। উপত্যকায় মেঘের আনাগোনা বেশ। পাহাড় থেকে আমরা কেবল নিচের দিকে নামছি আর নামছি। গাছপালা আর জঙ্গলে ঘেরা পথ। পাহাড়ি ঢালে জুমের খেতগুলো অসাধারণ দেখতে। সামনে বড় লুংমাই চাং পাহাড় আর দূরে সিপ্পি পাহাড় হাতছানি দিয়ে ডাকছে আমাদের। তবে আমরা যাচ্ছি পাহাড়ের কোলে লুকিয়ে থাকা কোনো এক ঝরনার খোঁজে।
ঘণ্টাখানেক নামার পর দেখা পেলাম বহতা এক খালের। ভরা বৃষ্টির সময় এ খাল ভয়াবহ রূপ ধারণ করে সন্দেহ নেই। পাথুরে খালে স্বচ্ছ পানির প্রবাহ দেখতে দারুণ! কোমরপানি মাড়িয়ে খাল ধরে হাঁটতে হলো বেশ কিছুক্ষণ। খাল পার হতে গিয়ে এক জায়গায় পড়লাম চ্যালেঞ্জের মুখে। অবশেষে বাঁশ সংগ্রহ করে পানির ওপর ফেলে পার হতে হলো ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাটি। এরপর আরেকটি পাহাড় বেয়ে নামার পালা। এখানে নামতে হয় রশি ধরে। খাড়া একটা পাহাড়ি ঢাল। সে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামতেই ঝরনার গুঞ্জন কানে এল। এ কোন ঝরনা! সামনে তার বিশাল বিশাল পাথর পড়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। কাছে এসে মনে হলো কোনো আদিম ও বুনো জায়গায় এসে উপস্থিত হলাম আমরা। অসাধারণ পানি পড়ার ছন্দ। একদিকে উঁচু পাথুরে পাহাড়। পাহাড়ের গা ঘেঁষে এ ঝরনা।
এখানে সাবধানে চলাচল না করলেই বিপদ। মুন থাংকে অনুসরণ করে পা টিপে টিপে হাঁটতে হলো ঝরনা এলাকায়। পাথরগুলো অনেক পিচ্ছিল। এই তিনাপ ঝরনা অনেকটাই বুনো। তিনাপ নামে একধরনের পোকার বসবাস এই ঝরনার পানিতে। তবে সব সময় এদের দেখা মেলে না। এই পোকার নামেই ঝরনাটি পরিচিতি পেয়েছে।
রুমা আর রোয়াংছড়ি উপজেলার সীমানায় এ ঝরনায় কিছু উৎসাহী পর্যটকের আনাগোনা বাড়ছে এক বছর থেকে। আমরা এমন এক সকালে তিনাপে গিয়ে পৌঁছলাম, চারদিকে অভাবনীয় ঝলমলে পরিবেশ। কেবল আমরাই যেন তিনাপকে আলিঙ্গন করতে এসেছি। ঘণ্টাখানেকের মতো থেকে, নির্মল স্বচ্ছ পানিতে গোসল করে ফেরার পথ ধরতে হলো আমাদের। আবার সেই পাইন্দু খাল পাড়ি দিতে হবে। উঠতে হবে ২ হাজার ৫০০ ফুট ওপরের আরথাহ পাড়ায়।
রুমা আর রোয়াংছড়ি উপজেলার সীমানায় এ ঝরনায় কিছু উৎসাহী পর্যটকের আনাগোনা বাড়ছে এক বছর থেকে। আমরা এমন এক সকালে তিনাপে গিয়ে পৌঁছলাম, চারদিকে অভাবনীয় ঝলমলে পরিবেশ। কেবল আমরাই যেন তিনাপকে আলিঙ্গন করতে এসেছি। ঘণ্টাখানেকের মতো থেকে, নির্মল স্বচ্ছ পানিতে গোসল করে ফেরার পথ ধরতে হলো আমাদের। আবার সেই পাইন্দু খাল পাড়ি দিতে হবে। উঠতে হবে ২ হাজার ৫০০ ফুট ওপরের আরথাহ পাড়ায়।
যেভাবে যাবেনবান্দরবান শহর থেকে রোয়াংছড়ি উপজেলা। তারপর সেখান থেকে গাইড নিয়ে রনিন পাড়া হয়ে তিনাপ সাইতার (ঝরনা)। এ পথ দিয়ে তিনাপ ভ্রমণ সম্পন্ন করতে লাগে তিন দিন। আর বান্দরবান শহর থেকে রুমা উপজেলার বেথেল পাড়া হয়ে আরথাহ পাড়া দিয়ে গেলে দুই দিন লাগে।
No comments:
Post a Comment